বাংলাদেশে প্রধান তথ্য কমিশনার আবদুল মালেকের কন্যা এনাবিলা তাবাসসুম মিকির বিএসসি ক্যাডার পদে নিয়োগ নিয়ে বড় ধরনের বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। এনাবিলা নিয়মিত বিএসসি পরীক্ষা না দিয়েই এই পদে নিয়োগ পেয়েছেন, যা নিয়োগ প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে।
আবদুল মালেক সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ সহকারী হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে তার কন্যাকে বাংলাদেশ পাবলিক সার্ভিস কমিশন (বিপিএসসি) দ্বারা লিখিত এবং মৌখিক পরীক্ষার মাধ্যমে একটি নন-ক্যাডার পদ দেওয়া হয়। তবে, এনাবিলা ওই সময়ের নিয়মিত বিএসসি পরীক্ষা দেননি, যা সাধারণত এই ধরনের পদে নিয়োগের জন্য প্রয়োজনীয়। এরপরেও, এনাবিলা পরবর্তীতে বিএসসি (পাবলিক হেলথ) ক্যাডারে অন্তর্ভুক্ত হন, যা পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ এনেছে।
২০১৯ সালে, এনাবিলাসহ ৯৫ জন কর্মকর্তার নিয়োগের নোটিশ প্রকাশিত হয়, কিন্তু ১৯৮১ সালের বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস নিয়োগ বিধিমালা পরিবর্তন করা হয়নি। এই নোটিশ আইনি চ্যালেঞ্জের কারণে হাইকোর্ট দ্বারা বাতিল করা হয়। তবে, ২০২২ সালে নতুন একটি নোটিশ প্রকাশিত হয়, যার মাধ্যমে ৯০ জন কর্মকর্তার মধ্যে এনাবিলাকেও বিএসসি ক্যাডারে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এটি নিয়োগ প্রক্রিয়ার নিয়ম ভঙ্গের আরও উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে।
২২ আগস্ট ২০২৪ তারিখে এনাবিলা কানাডিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশে মাস্টার্স ডিগ্রি করার জন্য স্টাডি লিভের আবেদন করেন। তার আবেদন পাবলিক হেলথ ইঞ্জিনিয়ারিং ডিরেক্টরেটের প্রধান প্রকৌশলীর দ্বারা অনুমোদিত হয়েছিল এবং এতে বলা হয়েছে যে, তিনি নিজেই তার পড়াশোনার খরচ বহন করবেন। তবে, ‘পাবলিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশন ট্রেনিং এবং হাইয়ার এডুকেশন পলিসি ২০২৩’-এর অনুযায়ী, স্টাডি লিভে সাধারণত পূর্ণ বেতন এবং ভাতা প্রদান করা হয়, যা প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা নিয়ে আরও প্রশ্ন তুলেছে।
সম্প্রতি, বিপিএসসির মধ্যে ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে, যার মধ্যে পরীক্ষার পেপার ফাঁস এবং ঘুষ গ্রহণের দাবি রয়েছে। দুর্নীতিবিরোধী কমিশন কয়েকজন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করেছে যারা তাদের পরিচিত আয় সুত্রের বাইরে ধনসম্পদ অর্জন করেছেন। বিগত ১২ বছরে বিএসসির পরীক্ষার পেপার ফাঁস হওয়ার ঘটনা অন্তত ৩০টির বেশি বলে জানা গেছে, যা ক্যাডার এবং নন-ক্যাডার পরীক্ষাকে প্রভাবিত করেছে।
এই পরিস্থিতি জনসাধারণের মধ্যে ক্ষোভ সৃষ্টি করেছে এবং নিয়োগ প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। এক সময় সততার জন্য প্রশংসিত বিএসসি এখন বিশ্বাসের সংকটে পড়েছে। এই কেলেঙ্কারি শুধু বর্তমান চাকরি প্রত্যাশীদেরই প্রভাবিত করেনি, বরং বাংলাদেশের পুরো সিভিল সার্ভিস নিয়োগ প্রক্রিয়ার ওপর সন্দেহের ছোঁয়া ফেলেছে।
নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার নিয়োগ প্রক্রিয়ার এই সমস্যা সমাধানে জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণের প্রয়োজন এবং জনসাধারণের বিশ্বাস পুনরুদ্ধারের জন্য কার্যকর সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। আবদুল মালেক এবং তার কন্যার ঘটনা বাংলাদেশের সিভিল সার্ভিসের চ্যালেঞ্জ এবং সৎ নিয়োগ নিশ্চিত করার জন্য সংস্কারের দ্রুততার গুরুত্বকে তুলে ধরছে।