৫ আগস্টের ইতিহাসমূলক ঘটনায় আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের জন্য ছাত্র জনতার গণ-অভ্যুত্থান ছিল বিজয়ের দিন, তবে গণভবনের নিরাপত্তায় নিয়োজিত বিশেষ নিরাপত্তা বাহিনী (এসএসএফ) সদস্যদের জন্য এটি ছিল আতঙ্কের দিন। শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালানোর পর গণভবনে ঢুকে পড়া হাজার হাজার মানুষের মধ্যে এসএসএফ সদস্যরা মাত্র পাঁচ মিনিটের মধ্যে প্রাণরক্ষার চেষ্টা করেন।
গণভবনে থাকা ট্যাক্টিক্যাল গিয়ার, অস্ত্র, গোলাবারুদ, সাজসরঞ্জাম, বেতার যোগাযোগ ও অপারেশনাল সরঞ্জামগুলি রেখে এসএসএফ সদস্যরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সংসদ ভবনে পালাতে বাধ্য হন। জনতা সংসদ ভবনেও প্রবেশ করলে, এসএসএফ সদস্যরা দ্রুত নিজেদের অস্ত্র ও পোশাক রেখে সাধারণ পোশাকে মিশে প্রাণ রক্ষা করেন।
এসএসএফের পর্যালোচনায় দেখা গেছে, গণভবন ও সংসদ ভবনে থাকা অস্ত্র, গোলাবারুদ ও অপারেশনাল সরঞ্জামাদির বড় পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। প্রতিবেদন অনুসারে, এসএসএফের লুট হওয়া এবং নষ্ট হওয়া সরঞ্জামাদি ও দ্রবাদির মূল্য প্রায় পাঁচ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে।
এসএসএফ তিনটি তদন্ত পর্ষদ গঠন করে ক্ষয়ক্ষতির বিস্তারিত নিরূপণ করে এবং প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয় যে, ৫ আগস্টের ঘটনায় বিভিন্ন অপারেশনাল সরঞ্জাম যেমন অ্যাসল্ট রাইফেল, স্নাইপার রাইফেল, ফ্ল্যাশব্যাং গ্রেনেড, অ্যান্টি-ড্রোন সিস্টেম, বেতার যোগাযোগের ডিভাইস এবং বিপুল পরিমাণ গোলাবারুদ লুট হয়েছে।
প্রতিবেদনটি বিস্তারিতভাবে তুলে ধরেছে:
– **অস্ত্র ও গোলাবারুদ:** প্রায় ১১ লাখ ৬২ হাজার টাকা ক্ষতি
– **গোলাবারুদ ও গ্রেনেড:** প্রায় ১১ লাখ ৪৪ হাজার টাকা ক্ষতি
– **যোগাযোগ ও অপারেশনাল সরঞ্জামাদি:** প্রায় ২ কোটি ৬৩ লাখ টাকা ক্ষতি
– **আইটি ও গোয়েন্দা সরঞ্জামাদি:** প্রায় ১ কোটি ৫৫ লাখ টাকা ক্ষতি
– **যানবাহন:** প্রায় ১৪ লাখ টাকা ক্ষতি
– **অন্যান্য দ্রবাদি:** প্রায় ৭৪ লাখ টাকা ক্ষতি
এসএসএফের প্রতিবেদন অনুযায়ী, গণভবনে দু’টি অত্যাধুনিক ভল্টে রাখা অস্ত্র ও গোলাবারুদ লুট হয়েছে এবং সংসদ ভবনের ভল্ট থেকেও অস্ত্র ও গোলাবারুদ চুরি হয়েছে। এছাড়া, গণভবনের ছাদে মোতায়েন করা অ্যান্টি ড্রোন গানের মতো গুরুত্বপূর্ণ সরঞ্জামও লুট হয়ে গেছে।
এসএসএফ সুপারিশ করেছে, অপারেশনাল রুমের নিরাপত্তা আরও বাড়ানোর জন্য একটি বিশেষ অফিসার্স পর্ষদ গঠন করা উচিত। এছাড়া, বেতার যন্ত্রের প্রাইভেসি কোড পরিবর্তন ও নতুন নেটওয়ার্কে যোগাযোগ করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত সরঞ্জামাদি ও যানবাহন মেরামতের পাশাপাশি, পরবর্তী অর্থবছরে নতুন অস্ত্র ও সরঞ্জাম কেনার প্রয়োজনীয়তা জানানো হয়েছে।
এসএসএফ-এর এই প্রতিবেদনের ভিত্তিতে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে দ্রুত কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।