আ. লীগ নেতার স্ত্রীর লাইব্রেরিয়ান থেকে এক লাফে অধ্যক্ষ

### লাইব্রেরিয়ান থেকে অধ্যক্ষ: আওয়ামী লীগ নেতার স্ত্রীর পদোন্নতি ও পদত্যাগ

এক লাফে লাইব্রেরিয়ান থেকে অধ্যক্ষ! ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. তাকজিল খলিফা কাজলের স্ত্রী তানিয়া আক্তার পৌঁছেছেন অধ্যক্ষের পদে। এ পদোন্নতির পেছনে রাজনৈতিক প্রভাব ও কৌশলের ভূমিকা ছিল বলে অভিযোগ উঠেছে।

বেশ কিছুদিন ধরে লাইব্রেরিয়ান হিসেবে কর্মরত তানিয়া আক্তারকে ১৩ জন প্রভাষককে পার করে কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ করা হয়। অভিযোগ রয়েছে, তার স্বামী, একজন প্রভাবশালী আওয়ামী লীগ নেতা এবং সাবেক মেয়র, তার স্ত্রীর ‘শখ পূরণে’ নানা কৌশল গ্রহণ করেন। ডিঙানো ১১ জনের কাছ থেকে দায়িত্ব নিতে অপারগতার চিঠি সংগ্রহ করে তানিয়া আক্তারকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়।

তিনি তানিয়া আক্তার, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. তাকজিল খলিফা কাজলের স্ত্রী। তাকজিল খলিফা তিনবারের মেয়র হিসেবে পরিচিত। সংস্কারের প্রয়োজনে কলেজ পরিচালনা কমিটি তাকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ পদে মনোনীত করেন, যদিও তার যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে।

সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের স্বাক্ষরে তানিয়া আক্তার লাইব্রেরিয়ান থাকা অবস্থায়ও প্রিন্সিপাল পদে পদোন্নতি পান। আনিসুল হক কলেজ পরিচালনা কমিটির সভাপতি। তানিয়ার স্বামী তাকজিল খলিফা, সাবেক আইনমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ বন্ধু।

৫ আগস্ট তাদের বাড়িতে ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় তানিয়া আক্তার ও তার স্বামী পলাতক রয়েছেন। তথাপি, ৫ আগস্টের পর তানিয়া আক্তার কাগজে কলমে জাহানারা হক মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ হিসেবে নিবন্ধিত থাকলেও কলেজে উপস্থিত ছিলেন না।

পরবর্তীতে, ২৭ আগস্ট তানিয়া আক্তার স্বাস্থ্যের সমস্যার কথা বলে পদত্যাগের ঘোষণা দেন। তার পদত্যাগ পত্রে উল্লেখ রয়েছে যে, তিনি শারীরিক অসুস্থতার কারণে স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করছেন। এই পত্র উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে জমা দেওয়া হয়েছে।

উল্লেখ্য, ১৩ ফেব্রুয়ারি, তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মুহা. শাহাজাহান মিয়া মারা যাওয়ার পর কলেজ পরিচালনা কমিটি তানিয়া আক্তারকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োগ দেয়। তানিয়া আক্তারের নামের পাশে বিএসসি (সম্মান), আর্কিটেক্ট এমএসসি (গ্রন্থাগার) লেখা ছিল, তবে তার ইনডেক্স নম্বর ছিল না, যা কলেজের অন্যান্য কর্মচারীদেরও ছিল।

তানিয়া আক্তারের বেতন লাইব্রেরিয়ান হিসেবে নয় হাজার টাকা ছিল, কিন্তু অধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার পর তার বেতন বেড়ে পনেরো হাজার টাকা করা হয়। প্রভাষক ও কর্মচারীদের অসন্তোষ সত্ত্বেও কেউ কোনো অভিযোগ তুলতে পারেননি। ৫ আগস্ট ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকার পরবর্তী সময়ে তাদের বিরুদ্ধে অনেকেই প্রতিবাদ করার সাহস পেয়েছেন।

এ বিষয়ে কলেজ পরিচালনায় থাকা আহবায়ক কমিটির শিক্ষক প্রতিনিধি প্রভাষক মো. ইলিয়াস মুন্সী জানান, তানিয়া আক্তারকে সাময়িকভাবে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ করা হয়েছিল, পরবর্তীতে নতুন অধ্যক্ষ নিয়োগের পরিকল্পনা ছিল।

আখাউড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা গাজাল পারভীন রুহি জানিয়েছেন, তানিয়া আক্তারের পদত্যাগ পত্র জমা দেওয়ার বিষয়টি তিনি শুনেছেন, তবে বিষয়টি নিশ্চিত করে কিছু বলা যাচ্ছে না।

কলেজ প্রতিষ্ঠা নিয়ে বিশৃঙ্খলার অভিযোগও রয়েছে। ২০১১ সালে ‘নাছরীন নবী পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়’ কলেজ শাখা চালু করার পর, ২০১৯ সালে এটি পৃথক কলেজ হিসেবে চালু হয়। আইনমন্ত্রীর মায়ের নামে নামকরণ করা হয় ‘জাহানারা হক মহিলা কলেজ’ এবং প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে তাকজিল খলিফা কাজলের নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়।

২০২২ সালের ৬ জুলাই কলেজটি এমপিওভূক্ত হয়, তবে তানিয়া আক্তারের পদ এখনও এমপিওভূক্ত হয়নি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *