ত্রাণ নিতে গিয়ে সড়কে ঝরল ৩০ বছর অপেক্ষার সন্তানের প্রাণ

**ফেনীতে বন্যার ত্রাণ নিতে গিয়ে ট্রাকচাপায় শিশুর মৃত্যু, পরিবারে শোকের মাতম**

ফেনীর দাগনভূঞার জায়লস্কর ইউনিয়নের সিলোনিয়া বাজারে বন্যার পানি বাড়ি-ঘর প্লাবিত হওয়ায় হুমায়ূন কবির, তার স্ত্রী রিজিয়া খাতুন ও সাত বছর বয়সী একমাত্র সন্তান জাফরুল ইসলাম প্রান্ত আশ্রয় নিয়েছিলেন এক আত্মীয়ের বাড়িতে। তারা পরিকল্পনা করেছিলেন যে, আগামীকাল পার্শ্ববর্তী উত্তর আলমপুর গ্রামে ফিরে গিয়ে বন্যার ধাক্কা সামলে ঘুরে দাঁড়াবেন। কিন্তু তাদের জীবনে নেমে এলো আরও বড় এক আঘাত।

আজ বুধবার দুপুরে সিলোনিয়া বাজারের পাশে বন্যার্তদের জন্য ত্রাণ হিসেবে খিচুড়ি বিতরণ করা হচ্ছিল। বিকেলে ত্রাণ নিতে যাওয়ার সময় ট্রাকের চাপায় ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় তাদের একমাত্র সন্তানের। ফেনী-নোয়াখালী আঞ্চলিক মহাসড়কে ঘটে এই সড়ক দুর্ঘটনা।

স্বজনরা জানান, রিজিয়া পেছন থেকে বারবার প্রান্তকে ডাকছিলেন, কিন্তু শিশুটি কানে তোলেনি। দুর্ঘটনার পর ফেনী জেনারেল হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, রিজিয়ার বুকফাটা আহাজারিতে হাসপাতালের পরিবেশ ভারী হয়ে উঠেছে। হুমায়ূন নির্বাক দাঁড়িয়ে আছেন।

হাসপাতালের জরুরি বিভাগের করিডোরে রিজিয়া বলছিলেন, “আমার বুকের মানিককে কেউ এনে দাও। আমি এখন কাকে নিয়ে বাঁচবো? আমি তাকে পেছন থেকে মানা করে বলেছিলাম, ‘যাস না’। সে বলেছিল, ‘আম্মা আপনার জন্যও আনবো’। আমার মানিককে আমার কাছে দাও। আমি শুধু তাকে একবার দেখতে চাই।”

রিজিয়ার আর্তনাদে হাসপাতালের অন্যান্য রোগী ও তাদের স্বজনদের চোখে জল এসে যায়।

প্রান্তের এক স্বজন রেহেনা খানম জানান, ৩০ বছর পর সন্তানের জন্ম হওয়ায় রিজিয়া দীর্ঘদিন ধরে শারীরিক নানা জটিলতায় ভুগছিলেন। হাসপাতালে আসা এক রোগীর স্বজন সজল আহমেদ বলেন, “৩০ বছর পর একটা ছেলে হয়েছিল, তাও এভাবে মারা গেল! আমরা মানতেই পারছি না। এই মা কীভাবে সহ্য করবেন!”

ফেনী জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা আসিফ ইকবাল ডেইলি স্টারকে বলেন, “নিহত শিশুর মরদেহ বর্তমানে হাসপাতালের মর্গে রয়েছে। পুলিশি তদন্তের পর মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে।”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *