**ফেনীতে ভয়াবহ বন্যায় মরদেহের সৎকার ও দাফনে চরম সংকট**
ফেনীতে পাহাড়ি ঢল ও টানা বৃষ্টির কারণে সৃষ্ট ভয়াবহ বন্যার পরিস্থিতি অত্যন্ত খারাপ হয়ে উঠেছে। পানির নিচে তলিয়ে গেছে সবকিছু, যার ফলে মৃতদের সৎকার এবং দাফনে বড় ধরনের সমস্যা দেখা দিয়েছে। বন্যার কারণে মরদেহের সৎকার করা সম্ভব না হওয়ায় কিছু মরদেহ কলাগাছের ভেলায় ভাসিয়ে দেওয়া হচ্ছে, এবং তাদের সাথে কাগজে দাফনের অনুরোধ লেখা হচ্ছে।
স্থানীয় সংবাদকর্মী নাজমুল হক শামীম জানিয়েছেন, শনিবার রাতে ফেনী শহরের মিজান রোডে সোনালী ব্যাংকের সামনে একটি শিশুর মরদেহ হাঁটু পানিতে ভাসছিল। স্থানীয়রা মরদেহটি জানাজা ও দাফনের জন্য নিয়ে গেলেও কোথায় দাফন করা হয়েছে তা জানা যায়নি।
রোববার, ফেনী সদর উপজেলার লালপোল এলাকার উত্তর গোবিন্দপুর গ্রামে বন্যার পানিতে আরেকটি শিশুর মরদেহ ভেসে আসে। পপি মজুমদার নামে এক স্থানীয় বাসিন্দা জানিয়েছেন, তার স্বামী মরদেহটি দেখে লোকজনকে খবর দেন। মরদেহটি সড়কের পাশে রাখা হয় এবং সঙ্গে একটি কাগজে লেখা ছিল, “বন্যার কারণে মাটি না পেয়ে কলার ভেলায় ভাসিয়ে দেওয়া হয়েছে। কেউ যদি লাশ পায়, দয়া করে কবর দিন।”
ফেনী জেলা জামায়াতে ইসলামী’র প্রচার সম্পাদক আ ন ম আব্দুর রহিম জানান, শনিবার সদর উপজেলার মৌটবী ইউনিয়নের সাতসতী গ্রামের নুরুল আলম (৬৫) মারা যান এবং তার মরদেহ কলার ভেলায় ভাসিয়ে দেওয়া হয়। একই দিনে কালীদহ রেললাইনের পাশে একটি অর্ধগলিত মরদেহও ভাসতে দেখা গেছে।
ওমানপ্রবাসী মাসুদ খান ফেসবুকে জানান, তার বাবা আলীম উল্লাহ (৭৩) মারা যাওয়ার পর মরদেহ কলার ভেলায় ভাসিয়ে দেওয়া হয়েছে। বন্যার কারণে তার দাফনের ব্যবস্থা করা সম্ভব হয়নি। চিরকুটে লেখা ছিল, “বন্যার কারণে মরদেহ দাফন করা সম্ভব হয়নি। দুদিন পর আমরা এটি পানিতে ভাসিয়ে দিয়েছি। দয়া করে কবর দিন এবং আমাদের ঠিকানায় যোগাযোগ করুন।”
সাংবাদিক ফারাবী হাফিজও ফেসবুকে জানান যে, কলার ভেলায় ভাসানো একটি মৃতদেহে লেখা ছিল, “মুসলিম মহিলা। দয়া করে জানাজা পড়ে দিন।” ওই নারী শিফু (৪২) নামের ব্যক্তি বন্যার পানিতে মারা যান এবং দাফনের সুযোগ না পেয়ে পানিতে ভাসিয়ে দেওয়া হয়।
ফেনী সদর উপজেলার উত্তর ধলিয়া গ্রামের লতিফ হাজী বাড়ির মৃত নুরুল আমিনের মেয়ে শিফু। তার ভগ্নিপতি শাহেদুল হক জুয়েল জানান, প্রশাসনের কাছে বারবার অনুরোধ করার পরও সহযোগিতা না পাওয়ায় মরদেহ পানিতে ভাসিয়ে দিতে হয়েছে।
এছাড়া, ফেনী নদীতে পড়ে নিখোঁজ হওয়ার তিন দিন পর মোহাম্মদ জাহেদুল ইসলাম (১৭) নামের যুবকের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। রবিবার রাতে নদী থেকে পড়ে নিখোঁজ হওয়া জাহেদুলের লাশ মঙ্গলবার সকালে উদ্ধার করা হয়।
ফেনী আল জামিয়াতুল ফালাহিয়া আশ্রায়ন প্রকল্পের মো. আজিজুর রহমান জানিয়েছেন, বন্যার পানিতে ভেসে আসা পাঁচটি লাশ শনিবার ও রবিবার দাফন করা হয়েছে। এছাড়া, আশ্রয়ণ প্রকল্পে স্বাভাবিক মৃত্যু হওয়া তিনজনের লাশও দাফন করা হয়েছে।
জেলা প্রশাসক শাহীনা আক্তার জানিয়েছেন, বন্যায় একজন মৃত্যুর তথ্য রয়েছে, তবে বাকি তথ্য যাচাই করার প্রক্রিয়া চলছে।